১৯৯৭ সালে সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘পরদেশ’ নামক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউডে ডেবিউ করেছিলেন অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী। আসলে পরিচালক মনে করতে তার ছবির নায়িকার নাম ‘ম’ অক্ষর দিয়ে হলে তবেই ছবি বক্স অফিসে হিট হবে। আর তাই “পরদেশ” ছবিতে প্রথমে নায়িকা হিসেবে ছিলেন রিতু চৌধুরি কিন্তু তা বদলে নায়িকা হিসেবে নেওয়া হল মহিমা চৌধুরিকে। আর ছবি মুক্তি পাওয়ার পর তা বক্স অফিসে তুমুল সাড়া ফেলেছিল। এই ছবিতে অভিনেত্রীর বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। আর এরপর অভিনেত্রীকে নিজের কেরিয়ার নিয়ে আর কোনো চিন্তায় করতে হয়েনি। একের পর হিট ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেত্রী। এর পাশাপাশি তার অসাধারণ কর্ম দক্ষতার জন্য তিনি বহু পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সব হিন্দি ছবিতে ক্রমাগত অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের বহু হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এরপর তিনি ৪ বছরের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন। তবে অভিনেত্রী ২০১৫ সালে পুনরায় অভিনয় জগতে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও তা দর্শকমহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আর্কিটেকচার ব্যাবসায়ী ববি মুখার্জীর সঙ্গে বিয়ে হয় অভিনেত্রীর। তবে অভিনেত্রীর এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে তার আরিয়ানা নামে ৮ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ২০১১ সালে মহিমার ডিভোর্স হয়ে যায়, আর এরসঙ্গে শেষ হয়ে যায় অভিনেত্রীর বৈবাহিক জীবনও। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ৯০ এর দশকে নিজের মিষ্টি হাসি দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী। অভিনয় জগতে নিজের জায়গা গুছিয়ে নিতে পারলেও ব্যক্তিগত জীবনে বহু কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে বারবার।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি যখন দুঃসহবাসে ছিলেন তখন তাকে বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো। তিনি বহুবার ভেবেছিলেন নিজের কাছের মানুষ বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে শেয়ার করবেন কিন্তু করে উঠতে পারেননি তিনি। প্রত্যেকবার ভেবেছেন এটি খুবই সামান্য ব্যাপার নিজের থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। আর এইভাবে দিনের পর দিন অভিনেত্রী নিজে মানসিক অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন। অভিনেত্রী মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর আবার ও একবার “মা” স্বাদ অনুভব করতে চেয়েছিলেন কিন্তু দুইবার গর্ভধারনের চেষ্টা করার পরেও, তাঁর গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই মুহূর্তে অভিনেত্রীর কাছে এটি একটি বড় মানসিক চাপ হয়ে উঠেছিল । অভিনেত্রী বললেন তিনি যখন ছবির শুটিং করতে বাইরে যেতেন তখন নিজের মেয়েকে নিজের মায়ের কাছে রেখে যেতেন আর ঠিক এই কারণেই একদিন তিনি এবং তার মেয়ে দুজনই তার মা এর কাছে থেকে গেলেন। এত দিন কোনও কিছু করে শান্তি পাচ্ছিলেন না মহিমা কিন্তু সেই দিন তিনি একটি মানসিক শান্তি অনুভব করেন। আর সেখান থেকেই তিনি নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
অভিনেত্রী ১৯৯৯ সালে অজয় দেবগণ এবং ও কাজলের প্রযোজনায় তৈরি ” দিল কেয়া করে” ছবির জন্য শুটিং করেছিলেন তিনি পাশাপাশি এই ছবিতে অজয় এবং কাজল দুজনকেই অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু ছবির শুটিং এর সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে গিয়েছিলো মহিমার সঙ্গে। হঠাৎ একটি ট্রাক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়ে ছিল অভিনেত্রীকে। আর ওই দুর্ঘটনায়, ট্রাকটির সামনের কাচ ভেঙে মহিমার মুখে বীভৎস বাজে ভাবে লেগেছিল। আর এরপর চিকিৎসক থেকে শুরু করে তার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা পর্যন্ত সব খরচা দিয়েছিলেন অজয় দেবগণ। মহিমা বললেন আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ওই ছবির প্রযোজক অজয় দেবগণের কাছে। এই ঘটনাটি ঘটার পর বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিলেন অজয় ও কাজল। কারণ তারা চাননি যে এই বিষয়টি কোনোরূপ জানাজানি হোক, তাহলে সেটা মহিমার অভিনয় জগতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, আর তাই এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিলেন সকলেই।